
রাজবাড়ীতে রেলক্রসিং যেন মরণফাঁদ নিমিষেই কেড়ে নিতে পারে প্রাণ
ঢাকা, ০৪ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ী জেলা সদর আওতাধীন বসন্তপুর রেলক্রসিং, খানখানাপুর রেলক্রসিং ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার রেলক্রসিংটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে রেলক্রসিং এলাকার বাসিন্দাদের। প্রতি মাসেই এই তিনটি পৃথক রেলক্রসিংয়ে প্রায় অর্ধশত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এতে করে সড়কে চলাচলরত যানবাহন এবং তার চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি এক নিমিষেই ওই রেলক্রসিং এলাকা দিয়ে পারাপাররত স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
জেলায় সদরের বসন্তপুর রেলক্রসিং থেকে ২০০ মিটার দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন বসন্তপুর কো-অপারেটিভ হাই স্কুল ও বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রাস্তার এপার-ওপার থেকে প্রতিদিন দুইটি বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করতে আসে। বেশিরভাগ সময় ওই রেলক্রসিং দিয়েই শিক্ষার্থীরা রাস্তা পারাপার হয়ে থাকে। আবার জেলা সদরের খানখানাপুর রেলক্রসিং থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরেও খানখানাপুর তমিজুদ্দিন খান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, আল নোমান কিন্ডারগার্ডেন, ১১৭ বছরের পুরানো বিদ্যাপীঠ খানখানাপুর সুরাজ মোহিনী ইনস্টিটিউট (স্কুল অ্যান্ড কলেজ) সহ আরো একটি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীদের প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা ওই রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হয়ে থাকে।
অপরদিকে জেলায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলাকার রেলক্রসিংটিও মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই রেলক্রসিংয়ের দুই পাশের স্পিডব্রেকার ও ডিভাইডার রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ভেঙে গেছে ডিভাইডারগুলো। এর ফলে ডিভাইডারগুলো ছোট ও ভাঙা হওয়ায় বিভিন্ন সময় পাল্লা দিয়ে পরিবহনের চালকরা গাড়ি পারাপার করে থাকে। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটে বিভিন্ন সময়ে। গত এক মাস ধরে সেই ভাঙা ছোট ডিভাইডারগুলো তুলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলেন, অনেক আগে থেকেই বসন্তপুর রেলক্রসিং একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কিন্তু এখানে ডিভাইডার দেওয়ার পর থেকে দুর্ঘটনার মাত্রা আরোও বেড়ে গেছে। ৩০ ফুট চওড়া সড়কের প্রায় দুই ফুট সড়ক ডিভাইডারই দখল করে রেখেছে। এছাড়া গাড়ি চালকদের সতর্ক করার জন্য এখানে যে স্পিডব্রেকার দেওয়া হয়েছে সেটিও ডিভাইডার থেকে মাত্র ২০ ফুট দূরে। ফলে দ্রুতগতির গাড়িগুলো এখানে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। একই অবস্থা হয়েছে জেলায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার রেলক্রসিংটিরও।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীর পৃথক তিনটি রেলক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কম চওড়া সড়কে ডিভাইডার স্থাপন এবং ডিভাইডারের অতি নিকটে স্পিডব্রেকার (গতিরোধক) দেওয়ার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যে কোনো সময় ঘটতেও পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহাসড়কের রেলক্রসিং এলাকায় স্পিডব্রেকারের দূরত্ব যদি রেলক্রসিং ডিভাইডার থেকে ১০০ ফুট দূরে হয়, তাহলে গাড়ি চালকরা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। এতে দুর্ঘটনাও অনেক কমে যাবে।
মহাসড়কে রাজবাড়ীর পৃথক তিনটি রেলক্রসিং এলাকার স্থানীয়রা ও গাড়ি চালকরা বলেন, রেলক্রসিং এলাকায় মহাসড়ক চওড়া করা এবং দুই পাশের স্পিডব্রেকার দুইটি ডিভাইডারের কাছ থেকে ১০০ ফুট দূরে স্থাপন এবং মহাসড়কের দুই পাশেই সতর্ক সংকেত বোর্ড স্থাপন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।