প্রবাসের খবর
লেবার-কনজারভেটিভ লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
ঢাকা, ০৪ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
যুক্তরাজ্যে আগামী বৃহস্পতিবার ৮জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যবর্তী সাধারণ নির্বাচন। গত ১৮ এপ্রিল দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে সংসদে মাত্র ৭ মিনিট ব্রিফিং শেষে ৬ সপ্তাহ সময় হাতে রেখে সকলকে চমকে দিয়ে হঠাৎ এই আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্য’র থাকা না থাকার প্রশ্নে সংসদে উত্থাপিত একটি বিলে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিতে সরকারি দল কনজারভেটিভ সদস্যদের মধ্যে দ্বৈতমত সৃষ্টি হয়। এতে দ্রুত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্বের পাশাপাশি একটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সরকারি দল কনজারভেটিভের পক্ষ থেকে এমন এক প্রেক্ষাপটের প্ৰয়োজনে সাধারণ নির্বাচনের কথা বলা হলেও পর্যবেক্ষকরা বলছেন ভিন্ন এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি-রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মুশতাক এইচ খানের কাছে।
তিনি বলেন, মূলত ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করেই এই মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিকে একটি ক্রিটিক্যাল গোলোক ধাঁধার মাঝে রেখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। যখন তিনি এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তখন লেবার পার্টির অবস্থা ছিল এক কথায় লেজেগোবরে। দলটির নেতৃত্বের টানাপোড়েন ছিল চরমে। লেবার দলের প্রধান জেরেমি করবিনকে অনেকেই আস্থায় নিতে পারছিলেন না। এখন মজার বিষয়ে হচ্ছে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে লেবার দলটি অনেকাংশে আটঘাট বেঁধে উঠতে পারলেও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র প্রতি সাধারণ ভোটারের আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে।
এমন প্রশ্নও উঠেছে যে এই নির্বাচনে যদি টেরিজা মে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হতে না পারেন তাহলে কি ব্রেক্সিট চিরতরে থেমে যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ব্রেক্সিট শুরু হয়েছিল একটি মেমোরেন্ডাম ভোটের মাধ্যমে অতএব আরেকটি মেমোরেন্ডাম ভোট ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যক্রম বন্ধ হবে না।
এদিকে লেবার পার্টির দলগত সিদ্ধান্ত ব্রেক্সিটের পক্ষে হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বা ২১৮ জন এমপি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অর্থাৎ ইউর সাথে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এমনকি সরকারিদল কনজারভেটিভের ১৮৫ জন এমপি ইউ’র সাথে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ১৩৮ জন ছিলেন ব্রেক্সিটের পক্ষে। এছাড়াও স্কটিশ পার্টির ৫৪ এমপিসহ আরো ২২ এমপি ছিলেন ইউ’র পক্ষে।
আরো মজার বিষয়ে হচ্ছে- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ওইসময়ে ইউ’র সাথে রিমেইন চাইলেও বর্তমানে তিনি ব্রেক্সিটের পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এমনই দ্বৈতনীতির মুখে ডেভিট ক্যামেরন পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন।
মি. খান বলেন, গত বছর ব্রেক্সিট প্রশ্নে স্মারক ভোটে হেরে গিয়ে ডেভিট ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর টেরিজা মে স্থলাভিষিক্ত হন।এরপর থেকে যুক্তরাজ্য’র অর্থনীতি-রাজনীতিতে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছিলো। এমন পরিস্থির মাঝেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মধ্যবর্তী নির্বাচন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেরিজা মে প্রধান বিরোধীদলের দুর্বলতাকে টার্গেটে রেখে তড়িগড়ি করেই মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘোষণা করেছেন। যাতে অগোছালো বিরোধীদল খুব একটা সুযোগ না পায়। এমন মোক্ষম সময়কে তিনি বেঁচে নিয়েছেন।
সরকারি দল কনজারভেটিভ মনে করছে সাধারণ ভোটাররা ব্রেক্সিট ও অভিবাসনের মতো কিছু বিষয়ে আমলে নিয়ে ভোট দিবেন। আর লেবার পার্টি ২০১০ সালের পরথেকে সরকারে থাকা কনজারভেটিভ দলের নানা ব্যর্থতার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ভোট টানার চেষ্টা করছে। এরমধ্যে চিকিৎসা সেবা, সোশ্যাল সিকিউরিটি, শিক্ষা, জননিরাপত্তাসহ অর্থনীতির বিভিন্ন দুর্বল বিষয়ে ব্যর্থতার দিকগুলো তারা তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে।
মি. খান মনে করেন- মূলত সাধারণ ভোটাররা এবারে সকল বিষয়ে চিন্তা করেই ভোট দিবেন। শুধু ব্রেক্সিট বা অভিবাসন নয়। কনজারভেটিভ বিগত নির্বাচনে লেবার পার্টির যে সকল সমালোচনা করে বিজয়ী হয়েছে এযাবৎকালে তার কোনোটাতেই তাদের সাফল্য নাই। লেবার পার্টির শাসনকালের সবচেয়ে কড়া সমালোচনা ছিল অভিবাসন নিয়ে। কনজারভেটিভ ফলাও করে প্রচার করেছিল তারা ক্ষমতায় গেলে বর্ডার সুরক্ষিত করবে। বাস্তবতা হচ্ছে কনজারভেটিভের শাসনকালে অভিবাসন বেড়ে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এমন বাস্তবতার কাছে হার মেনে কঠোর জাতীয়তাবাদী দল ইউকিপ সময়ের ডাইনোসোরে পরিণত হয়েছে।
২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। এবার সেখানে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে ৮জন, চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং লিবারেল ডেমোক্রেট ও ফ্রেন্ডস পার্টি থেকে একজন করে। তবে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ৪ নারী। এদের মধ্যে বিজয়ের সম্ভাবনায় রয়েছেন ৩ জনের।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে হাউজ অব কমন্সের ৬৫০ আসনে বর্তমান সরকারি দল কনজারভেটিভ ৩৩১ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। আর লেবার পার্টি পেয়েছিলো ২২৯ আসন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মনোনয়ন পেয়েছিলেন পাঁচজন। যাদের মধ্যে তিন নারী জয়ী হন।
তিনজনের মধ্যে রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপা হক এবারও লেবার থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের সঙ্গে এবার প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার বাবুল মিয়া, মেরিনা আহমদ, রওশন আরা, ফয়সল চৌধুরী এমবিই ও আবদুল্লাহ রুমেল খান। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির থেকে সাজু মিয়া, ফ্রেন্ডস পার্টি থেকে আফজল চৌধুরী মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন আজমল মাশরুর, অলিউর রহমান, আবু নওশাদ ও ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর।