
মহীয়সী নূরজাহান বেগমের ৯৩তম জন্মদিন আজ
ঢাকা, ০৪ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
নূরজাহান বেগম বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত এবং সাহিত্যিক ।বেঁচে থাকলে তিনি আজ ৯৩তম বছরে পা রাখতেন।
ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা `বেগম` এর জন্য তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন। এটি শুধু নারীদের পত্রিকাই নয়, নারী জাগরণেরও একটি অনন্য প্লাটফর্ম ছিল এই পত্রিকা।তার পিতা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। যাকে আমরা ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে সকলেই জানি।
নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে ।
‘বেগম’ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই।নূরজাহান বেগম তখন বিএ ক্লাশে। নূরজাহান বেগমের মতো যারা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি বেবোর্ন কলেজে পড়তেন তারা সবাই মিলে বেগম-এর জন্য কাজ করতেন। ‘বেগম’ পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকেই এর সম্পাদনার কাজে তিনি জড়িত ছিলেন এবং ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
অবশ্য ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল। প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।‘বেগম’-এর প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি। মূল্য ছিল চার আনা। প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছিল বেগম রোকেয়ার ছবি।
১৯৫০ সালে তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকায় এসে নারীদের ছবি আঁকা ও লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন নূরজাহান বেগম।যারা লেখা পাঠাত তাদের ছবিও ছাপাতেন ।সে সময়ে নারীদের ছবি তোলা নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। তাই ওই সময়ে নারীদের জন্য একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। ‘বেগম’ এ প্রথমদিকে পুরুষরাও লিখতেন। পরে শুধুমাত্র নারীরাই লিখতেন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন মহিলা সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মিসেস আইদা আলসেথ ঢাকায় ‘বেগম’ পত্রিকা অফিস পরিদর্শন করেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বেগম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রেসিডেন্ট হন বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, সেক্রেটারি হন নূরজাহান বেগম এবং বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন এর অন্যতম উপদেষ্টা।
নূরজাহান বেগম ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
‘বেগম’ শুধু নারীদের উদ্দেশ্য করে গোড়াপত্তন হলেও এর পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না। ধীরে ধীরে এই পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নূরজাহান বেগম শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে নয়, নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে ‘বেগম’ পত্রিকাকে গড়ে তুলেছিলেন।নূরজাহান বেগম এমন একটি পত্রিকার ইতিহাস রেখে গেলেন যেটি এ অঞ্চলে বহু নারীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০১১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
২০১৬ সালের ২৩ মে ৯১ বছর বয়সে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহীয়সী নারী।