
আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন
ঢাকা, ০৭ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
আজ রমজানের ১১তম দিবস। মাগফিরাতের প্রথম দিন। প্রথম দশকে আল্লাহতায়ালা রহমত ও করুণার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। এ দশকে তিনি অবারিত করে দিয়েছেন তাঁর মাগফিরাত অর্থাৎ ক্ষমার ভাণ্ডার। দয়াময় তিনি ক্ষমার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অগণিত, অসংখ্য পাপী-তাপীকে তিনি মাগফিরাত আর ক্ষমা নামের মহাসাগরে ভাসিয়ে পৌঁছে দেবেন তার কাঙ্খিত মঞ্জিল মুক্তির মোহনায়।
দয়াময় মানুষকে সৃষ্টি করেছেন প্রেম আর ভালোবাসা দিয়ে। তিনি চাননা তাঁর কোনো বান্দা জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হোক, তিনি চান তাঁর প্রতিটি বান্দাকে এ রমজানের দ্বিতীয় দশকে মাগফিরাতের মধুর ঝরনা ধারায় স্নান করিয়ে ধুয়ে-মুছে মণি-মুক্তায় পরিণত করতে। তাই তিনি এ দশকে ক্ষমার চাদর বিছিয়ে চাচ্ছেন প্রতি বান্দাকে ক্ষমার চাদরে ঢেকে দিতে।
ফলে তিনি সেহরির আগ মুহূর্তে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমান থেকে দরদভরা ঘোষণায় আহ্বান করতে থাকেন, ‘আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী! ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ হাদিসে এসেছে শেষ রজনীতে আল্লাহর রহমতের সাগরে জোয়ার সৃষ্টি হয়, যার ফলে সে সময় প্রতিটি ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে তিনি ক্ষমা করে দেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ দয়াময়-ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
মানুষ ভুল করবে, গোনাহ করবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু রাসূল (সা.) বলেন, তবে উৎকৃষ্ট পাপী হল ওই ব্যক্তি যে পাপ করা মাত্রই ক্ষমা প্রার্থনা করে ফেলে। অন্য হাদিসে আছে, মানুষ গোনাহ করলে তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে আর তওবা করলে সে দাগ মুছে যায়, তা নাহলে সে দাগ থেকে যায়। এভাবে দাগ পড়তে পড়তে তার অন্তর রাজ্য অন্ধকারে ভরে যায় সেখানে আলো বলতে আর কিছুই থাকে না, ফলে ওই ব্যক্তি তখন পাপকে আর পাপ মনে করে না। বান্দা ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহতায়ালা সীমাহীন খুশি হন। এ খুশির ফল হিসেবে তিনি সে বান্দাকে মাফ করে দেন এবং তাকে অনেক বেশি কাছে টেনে নেন।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে শত অভাবেও তার জন্য রাস্তা খুলে যাবে, তার দুশ্চিন্তা দূর হবে। আর সে এমনভাবে রিজিকপ্রাপ্ত হবে, সে কল্পনাও করতে পারবে না। ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা গোনাহ তো মাফ করেনই ওই বান্দার মর্যাদাও বৃদ্ধি করেন। রমজান মাস হল সব ধরনের পাপ-তাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন নির্মল, স্ফটিক মুক্তায় পরিণত হওয়ার মাস। গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার বড় সুযোগ এ মাসে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, যে রমজান পেল অথচ পাপমোচন করাতে পারল না তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। মুসতাদরাকেহাকেমের বর্ণনায় এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জিব্রাইল (আ.) এসে বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে রমজান পেল অথচ তার গোনাহ মাফ হল না, আমি জবাবে বললাম আমিন।’
এর কারণ হল রমজান মাসে আল্লাহর রহমত-করুণা, মাগফিরাত বৃষ্টির মতো বর্ষিত হতে থাকে, এরপরও যদি কেউ রহমত আর মাগফিরাতের বৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে নিজেকে নির্মল না করতে পারে, এর মূল্য উপলব্ধি করে যদি এর কদর না করে, অন্য ১১ মাস যেমন উদাসীনভাবে হেলায়-ফেলায় কাটিয়ে দেয় এ মহামূল্যবান মাসও যদি এমনিভাবে কাটিয়ে দেয় তাহলে সে তো অবশ্যই হতভাগা, তার জন্য আফসোস আর দুঃখ করা ছাড়া কিইবা করার থাকতে পারে। আল্লাহতায়ালা আমাদের এ হতভাগাদের কাতারে শামিল না করে ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দা হিসেবে সফলতার কাতারে শরিক হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।