
সরকারের ‘শুভবুদ্ধির’ আশায় ফখরুল
ঢাকা, ১০ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
দাম্ভিকতা ছেড়ে মানুষের চিন্তা-চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে সরকারের ‘শুভবুদ্ধির উদয় হবে’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উদ্যোগে এই ইফতার অনুষ্ঠান হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে এসেছি, আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে সকলে অংশগ্রহণ করুক, সকল মানুষ তাদের নিজের ভোট নিজে দিতে পারুক, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক।’
‘এই সরকার নির্বাচনকে এককভাবে করার জন্যে, বিরোধী দলকে কোনো সুযোগ না দেওয়ার জন্যে বিভিন্ন কায়দায় কাজ করছে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচন অবশ্যই সমান্তরাল ফিল্ডে হতে হবে, সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করব, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, দাম্ভিকতা ছেড়ে দিয়ে সহনশীলতাকে রেখে সকল মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে একটি নির্বাচন দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
সরকার বিরোধী দলের ইফাতার অনুষ্ঠানে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ইফতারের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকার বাধা দিচ্ছে। শুধু বাধাই দিচ্ছে না, এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে। এর থেকে এই সরকারের চরিত্র আরো বেশি করে উন্মোচিত হচ্ছে। সরকার যে মাঝে মাঝে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত না দেওয়ার কথা বলে সেটা যে শুধু প্রতারণা, এই ঘটনাগুলো থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ভোলার একটি উপজেলা ও বুধবার খুলনার একটি থানায় দলের ইফতার অনুষ্ঠানে পুলিশের বাধা প্রদান এবং সেখান থেকে নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের ঘটনা তুলে ধরেন ফখরুল।
‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোলার তমিজউদ্দিন উপজেলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ সাহেবের এলাকায় ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে মাইক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। ইফতারের পরে সেই উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত পরশু একইভাবে খুলনায় আরেক থানায় নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলাম তারা বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আগামী ১২ তারিখে ইফতারের আয়োজন করেছিল, পুলিশ তা বন্ধ করে দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদিকে সরকার আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিচ্ছে না, অন্যদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে, অন্যদিকে বিশেষ বিশেষ ধর্ম প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে।’
‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই সরকারের সময়ে কীভাবে বিনষ্ট হয়েছে! হিন্দুদের মন্দির বিনষ্ট করা হয়েছে, তাদের জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে, আমাদের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে, আমাদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি রয়েছে, তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। কয়েকদিন আগে রাঙামাটিতে তাদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে,’ বলেন তিনি।
সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থাতে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমানতের ওপরে লাখ টাকায় আবগারি শুল্ক এই বাজেটে ধার্য্ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট যে দিয়েছে, সেটাতে পুরো করের বোঝা সমস্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।’
ইফতার মাহফিলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, সহসভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জহিরুল হক ভুঁইয়া, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব শাহীনুল পাশা চৌধুরীসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন মির্জা ফখরুল।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম খান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের কাজী আবুল বাশার, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাংবাদিক উবায়দুর রহমান খান নদভী প্রমুখ ইফতারে অংশ নেন।