বিনোদন

ঋতু বদলের রহস্য কী?

ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর,(ডেইলি টাইমস ২৪):

বলা যায় একটা ইতিহাসের নাম ঋতুপর্ণা। যে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের গল্প। গণমাধ্যমে বারবার ব্যর্থ নায়িকার শিরোনাম হয়েছেন তিনি। আবার হয়েছেন প্রশংসিত নায়িকার শিরোনামও। সফলতা এবং ব্যর্থতা যে হাত ধরাধরি করে চলে তা খুব কাছ থেকেই দেখা তার।

ঋতু বদলের মতোই বারবার বদলেছে তার ক্যারিয়ারের পাল। ১৯৯৫ সালে ‘শ্বেতপাথরের থালা’ ছবির মাধ্যমে রূপালী পর্দায় যাত্রা শুরু তার। এ ছবিতে তিনি সহ-অভিনেত্রীর চরিত্রে কাজ করেছিলেন। প্রথম ছবিতেই হিট। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। কলকাতার প্রভাত রায়ের এই ছবিটি সেই বছর শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।

এরপর ‘সুজন সখী’, ‘নাগপঞ্চমী’, ‘মনের মানুষ’ ও ‘সংসার সংগ্রাম’ শিরোনামের ছবিগুলো তার শুরুর দিকের ক্যারিয়ারকে আলোকিত করে তোলে। মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে ‘মোহিনী’ নামে একটি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেন।

এছাড়াও ‘তিসরা কোন’ নামে একটি হিন্দি ছবিতেও ঋতু নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে দাপট দেখানো এ নায়িকার ২০১৫ সালের আগের বারোটি বছর নিজের বলে কিছু ছিল না। বলতে গেলে এ সময়টা ঋতুর জন্য অন্ধকারের যুগ। এক সময়ের দাপুটে নায়িকা হয়েও কলকাতার ফিল্মপাড়ায় তাকে নানা অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে। সে সময়টা ঋতুকে ক্রমশ একা একাই পথ চলতে হয়েছে।

বড় কোনো হিরো বা প্রযোজকের কোনো সাহায্য ইন্ডাস্ট্রিতে পাননি। অথচ সে সময়টা অনেক নতুন নায়িকাই যৌবন আর ওয়েস্টার্ন পোশাকে আভির্ভূত হয়ে নাম্বার ওয়ানের জায়গা দখল করেছেন। আর ঋতু তখন অবজ্ঞার পাত্রী। এমন কী যার সঙ্গে দীর্ঘ একটা সময় অভিনয় করে বেড়িয়েছেন সেই প্রসেনজিতও খুব একটা খোঁজ নেননি তার।

এ জগৎটা যে খুব কঠিন তা হাড়ে হাড়ে বোঝা আছে ঋতুপর্ণার। মাঝ বয়সী ঋতুকে নিয়ে কাজ করতে অনীহা অনেক নির্মাতারাই। তিনিও বুঝে গেলেন বদলে যেতে হবে। ঠিক ঋতু বদলের মতোই। স্রেফ এ সংকল্পই তাকে পথ দেখালো। এর সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রম আর অভিনয় ক্ষমতা রয়েছেই।

এই ত্রিভুজে ভর দিয়ে ফের টালিগঞ্জের নিজেকে ফিরিয়ে আনলেন সেরা স্থানে। নিজের জীবনের ইতিহাস ঘুরিয়ে দিলেন। হয়ে উঠলেন নতুন খবরের শিরোনাম। ২০১৫ সালের পর থেকে সময়টা নিজের করে নিয়েছেন ঋতুপর্ণা। রয়েছে এখনও।

অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনই বলা যায় এটাকে। সে বছর ‘বেলা শেষে’ ছবিটি ক্যারিয়ারের নতুন মোড় ঘুরিয়ে দেয় ঋতুপর্ণার। এরপর মুক্তি পায় সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনী’ ছবিটি। ২০১৬ সালের ইতিহাস তো আরও সমৃদ্ধ। এ বছর ‘প্রাক্তন’ ছবিটি দিয়ে নতুন করে জানান দেন ঋতুপর্ণার ‘কৈ মাছের প্রাণ’। ঝরে যাওয়ার জন্য আসেননি। একই বছর মুক্তি পায় ‘তদন্ত’ ও ‘রাতের রজনীগন্ধা’।

সংগ্রামী এ অভিনেত্রীর জন্ম উইকিপিডিয়ায় কলকাতায় লেখা হলেও তার ভাষ্য মতে তার জন্ম বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়। তাই বাংলাদেশের প্রতিই তার বিশেষ টান। এ টানের পেছনে আরও একটা কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেটা হল বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করেই আজকের ঋতুপর্ণা হয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে বাংলাদেশের দর্শকরাই তার সঙ্গে ছিলেন। রয়েছেন এখনও।

বাংলাদেশে হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে ‘রাঙা বউ’, হেলাল খান ও আমিন খানের সঙ্গে ‘সাগরিকা’, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ‘চেয়ারম্যান’, প্রয়াত মান্নার ‘স্বামী ছিনতাই’ ছবিতে অভিনয় করেছেন।

এ ছাড়াও বাংলাদেশের নায়ক ফেরদৌস ও ঋতুপর্ণাকে সফল জুটিই বলা হয়। বয়স ৪৫ পার করছেন এখন। রয়েছে অঙ্কন ও রিসোনা নিয়া নামে এক পুত্র ও কন্যা সন্তান। এ বয়সেও অষ্টাদশী নায়িকাকেও হার মানাবেন তিনি। আচমকা ঋতুবদলের গল্প কী? জানতে চাইলে এ তারকা বলেন, ‘ঋতুবদল কিনা জানি না, তবে কাজের প্রতি আমার প্যাশনটা অনেকের চেয়ে বেশি। সেটাই হয়তো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যখন পাশে কেউ থাকে না তখন যুদ্ধটা নিজের একাই করে যেতে হয়। সেটা আমি করতে জানি।’

এ বিশ্বাস নিয়েই গত প্রজন্মের নায়িকা হয়েও এবার চিত্রনায়ক আলমগীরের পরিচালনায় ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে এ প্রজন্মের নায়ক আরেফিন শুভ’র বিপরীতে অভিনয় করতে মাঠে নেমেছেন। সপ্তাহ ধরে এফডিসিতে চলছে এ ছবিরই শুটিং। ঋতুপর্ণার ভাষায় এ ছবিটিও তার ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button