
জেলার সংবাদ
কালো তালিকায় ৭৬৭ চালকল মালিক
ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর,(ডেইলি টাইমস ২৪):
চাল সরবরাহে সরকারি খাদ্যগুদামের সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নওগাঁর ৭৬৭টি চালকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব চালকল মালিক আমন মৌসুমসহ আগামী দুই বছর অর্থাত্ চার মৌসুম সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, রংপুরের বদরগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চাল মজুদ করার দায়ে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে। আর ডুমুরিয়া, কাহারোলসহ বিভিন্ন উপজেলায় খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ১৬৭টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে মাত্র ৪০০ জন চালকল-মালিক চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ফলে এখন পর্যন্ত চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা চার ভাগের এক ভাগও অর্জিত হয়নি। খাদ্য বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, জেলায় বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যে ১ মে থেকে জেলার ১ হাজার ১৬৭টি চালকল মালিককে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চুক্তি করতে বলা হয়। চুক্তির শেষ সময় ছিল ২০ মে। এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৬৫ জন চুক্তিবদ্ধ হন। পরে চুক্তির মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বর্ধিত সময়ের মধ্যে আরো ২৩৫ জন চুক্তিবদ্ধ হন। মোট ৪০০টি চালকল মালিক ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হন। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭শ’ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহের শেষ সময় ৩১ আগস্ট হলেও সময় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। চুক্তি এড়িয়ে যাওয়া ৭৬৭টি চালকলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সরকার চাল কেনার জন্য প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের মূল্য ৩৪ টাকা এবং আতপ চালের মূল্য ৩৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ খোলা বাজারে সর্বনিম্ন মানের চাল কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। চাল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসান গুনতে হবে ভেবে অধিকাংশ চালকল মালিক খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হননি। অনেক মালিক লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে লোকসানের কথা ভেবেই চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
সদর উপজেলার মেসার্স আল-আমিন চালকলের মালিক আব্দুল হাকিম বলেন, প্রতিকেজিতে ৩-৪ টাকা লোকসান দিয়ে খাদ্য গুদামে ১০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার থেকে যে সুবিধা দেয়ার কথা ছিল তা এখনো দেয়া হয়নি। চুক্তিবিহীন মেসার্স কাউসার চালকলের মালিক ফিরোজ হোসেন বলেন, ধান কিনে চাল উত্পাদন করতে খরচ বেশি হচ্ছিল। এছাড়া খোলা বাজারেও চালের দাম বেশি ছিল। ছোট চালকল হওয়ায় সরকারের সাথে চুক্তি করতে না পারায় এখন কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একদিকে দুই বছরের জন্য লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে, অপরদিকে ব্যাংক লোন। বেশ ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেলাম।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, কোনো চালকল মালিক নিজের ক্ষতি করে খাদ্য গুদামে চাল দিতে চান না। আর খাদ্য গুদামের সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় চালকল মালিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, যেসব মালিক চাল সরবরাহে চুক্তি করেননি, তারা আগামী দুই বছর কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। আর যারা চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হবেন, তারা এক বছর (দুই মৌসুম) চুক্তি করতে পারবেন না।
বদরগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
বদরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, রংপুরের বদরগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চাল মজুদ করার দায়ে জহুরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তিনি মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর এলাকার ধনতলার মতিয়ার রহমান ভরসার ছেলে। শুক্রবার বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চেংমারি বাজারে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীর গোডাউনে ৯ মেট্রিক টন চাল পায়। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মকবুল হোসেন জানান, ওই ব্যবসায়ী বিনা লাইসেন্সে ওই চাল মজুদ করেছিলেন। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুল হক তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই চাল বাজারে বিক্রির নির্দেশ দেন। ওই ব্যবসায়ী অনুপস্থিত থাকায় জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন তার মনোনীত সাপ্তাহিক জাগো রংপুরের সম্পাদক ও প্রকাশক আনম ফেরদৌস আলী।
দুর্গাপুরে খুচরা বাজারে দাম বেশি
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা জানান, সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কমলেও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে এখনো বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন খুচরা ব্যাবসায়ীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহ ধরে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে মোটা চাল ৪৬- ৪৮ টাকা, এলসি ২৮ চাল ৫৬- ৫৮, মিনিকেট ৬২-৬৫, নাজির ৭২-৭৫ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
ডুমুরিয়া ও কাহারোলে ৩০ টাকার বিক্রি শুরু
ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক গতকাল শনিবার সকাল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানান, ডুমুরিয়া মাছ বাজারে আছফার হোসেন জোয়ার্দার, কাউন্সিল সড়কে প্রভাষ কুমার রাহা ও কালীবাড়ি মোড়ে প্রণব মুখার্জী নামের তিনজন ডিলারের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিরতিহীন ভাবে ৫টা পর্যন্ত আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ভোক্তারা ৩০ টাকা কেজি দরে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল কিনতে পারবেন। প্রতিদিন একজন ডিলারের ১ টন চাল খোলা বাজারে বিক্রির নিয়ম রয়েছে। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আব্দুস সোবহান বলেন, চালের মান যথেষ্ট ভালো। ফলে ভোক্তা চাহিদাও রয়েছে। ডুমুরিয়ায় মোটা জাতের সিদ্ধ চাল বিক্রি করা হচ্ছে।
কাহারোল (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, কাহারোল উপজেলা সদরে ৩০ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্ব-স্ব ডিলার প্রতি ক্রেতার নিকট ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল বিক্রি করবেন। কাহারোল নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ বলেন, চাল বিক্রয়ের কাজে কোনো প্রকার দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়া হবে না।