
অর্থ ও বাণিজ্য
আমানত কমাতে নতুন শর্ত জুড়ছে ব্যাংক
ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর,(ডেইলি টাইমস ২৪):
এক সময় আমানত সংগ্রহের জন্য মরিয়া ছিল ব্যাংকগুলো। আমানতকারীদের দেওয়া হতো বিভিন্ন অফার। উচ্চ সুদের সেসব আকর্ষণীয় সঞ্চয় প্রকল্পে প্রলুব্ধ হয়ে সঞ্চয়ও করতেন মানুষ। তবে এখন ব্যাংকগুলোতে আমানতে প্রয়োজন নেই। ব্যাংকগুলোতেই পড়ে রয়েছে প্রচুর অলস অর্থ। আর সেসব অর্থ ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকাররা। মূলত, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা সামাল দিতে আমানতকারীদের কিভাবে নিরুত্সাহীত করা যায় সে পদ্ধতি খুঁজে বের করছেন ব্যাংকাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক নিয়ম করেছে কোন গ্রাহক মেয়াদী সঞ্চয়ী হিসাব খুললে একটি সাধারণ হিসাবও খুলতে হবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা দিতে হবে। সারাসরি সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা দেওয়া বা তোলা যাবে না। কয়েকটি ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে নতুন পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক। আবার কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক না হলেও গ্রাহকদের উত্সাহিত করা হয় নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে। এর ব্যতিক্রম হবে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে চায় না তারা। কোন কোন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক না করলেও শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাধ্যতামূলক করেছেন।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রাহকের স্বার্থে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরাসরি সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা জমা দিতে অনেক ভিড় হয়। অনেক সময় ভিড়ের মধ্যে ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা জমা নিলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ব্যাংকিং লেনদেনকে আরও সহজ করতে নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন এ নিয়মের কারনে সঞ্চয়কারীরা বিপাকে পড়েছেন। সাধারণ হিসাব খুলতে কমপক্ষে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ফি লাগে। হিসাব পরিচালনা করতে ফি নেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। এর বাইরে চেকবই, এটিএম কার্ড, অনলাইন চার্জ, চেক ক্লিয়ারিং চার্জ দিতে হচ্ছে। এর বাইরে বছর শেষে সরকারকে দিতে হচ্ছে কর। এসব হিসাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখতে হবে। না রাখলে বাড়তি ফি দিতে হবে। জমা টাকার বিপরীতে ব্যাংকগুলো কোন মুনাফা দেয় না বললেই চলে। সব মিলে গ্রাহকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এ ধরনের কোন নির্দেশনা ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়নি। তারা কাজের সুবিধার্থে হয়তো এমনটি করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমানতকারীরা যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে।
ব্যাংকগুলোর আকর্ষণীয় মুনাফার সঞ্চয় প্রকল্পগুলোতে মাত্র তিন বছর আগে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হতো। এখন সুদ হার কমিয়ে করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। কয়েক বছরের ব্যবধানে এসব প্রকল্পের সুদ হার অর্ধেকের বেশি কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। কিছু কিছু ব্যাংক সঞ্চয়কারীদের নিরুত্সাহিত করছে। কেউ ব্যাংকে আসলে প্রথমেই সুদ হার অনেক কমিয়ে বলছেন ব্যাংকাররা।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই ব্যাংকে একটি সঞ্চয় প্রকল্পে প্রতি মাসে ২৫০, ৫০০, এক হাজার, দেড় হাজার, দুই হাজার টাকা করে জমা রাখার সুযোগ ছিল। ৩, ৫, ৮, ১০ বছর মেয়াদে এ টাকা জমা রাখা যেত। সুদ হার ছিল ১২ শতাংশেরও বেশি। এ প্রকল্পে রিক্সাচালক, ভ্যান চালক, ছোটখাট দোকানীরা টাকা জমা রাখতো। ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল ওই প্রকল্পটি। সুদহার কমে যাওয়া নতুন নিয়মের কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এধরনের প্রকল্প।