
ভ্রমণ : রহস্য আর ভালোলাগায় ঘেরা ইস্টার আইল্যান্ড
ঢাকা,০৩ অক্টোবর,(ডেইলি টাইমস ২৪):
চিনির বিস্ময়কর এক অঞ্চল ইস্টার আইল্যান্ড। ওখানে গেলে কী কী দেখবেন তা বলে শেষ করা যাবে না।
পর্যটকরা জীবনে একবার হলেও সেই দ্বীপে ঢুঁ মারতে চান। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রত্যন্ত দ্বীপটিতে পা ফেললেই সেখানকার প্রাচীন আর পাথুরে নির্বিকার মুখগুলো দেখলে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যাবেন।
পলিনেশিয়ার এক আগ্নেয়গিরির দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ড। স্থানীয়রা একে রাপা নুই বলে ডাকে। পুরাতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে বিখ্যাত। এখানে প্রায় ৯০০টি পাথুরে মূর্তি রয়েছে যাদের বলা হয় মোয়াই। সেই ১৩ শো থেকে ১৬ শো শতকে এগুলো বানিয়েছিল সেখানকার অধিবাসীরা। এগুলো দেখতেই ছুটে আসে ভ্রমণপিয়াসী মানুষরা।
আগ্নেয়গিরির বিশাল সব জ্বালামুখ, পাথুরে গ্রাম, সৈকত, অসাধারণ সামুদ্রিক খাবার এবং জলজ জীবন এখানে অনবদ্য।
চিনির অধীনে থাকা এই দ্বীপটি থেকে সবচেয়ে কাছের মনুষ্যবসতি পিটকেইর্ন আইল্যান্ডও ১৩ শো মাইল দূরে। কাজেই রীতিমতো অভিযাত্রীর অভিজ্ঞতা মিলবে সেখানে গেলে। যত প্রত্যন্তই হোক না কেন, পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সবই মিলবে।
সেখানে যাওয়া যে অনেক কঠিন হবে তা কিন্তু নয়। ল্যাটিন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় ক্যারিয়ার লাটাম এয়ারলাইন্স সপ্তাহে কয়েকবার সান্তিয়াগো এবং চিলি থেকে সেখানে যায়। সপ্তাহে একবার উড়াল দেয় পাপিতে আর তাহিতি থেকে।
দ্বীপটিতে গেস্টহাউজ, বিলাসী রিসোর্ট এর এয়ারবিএনবি রয়েছে থাকার জন্য। ঘুরে দেখতে পারবেন ইউনেস্কোর নকশায় তৈরি করা ন্যাশনাল পার্ক। স্থানীয়রা এবং চিলির মানুষরা ইস্টার আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন। ১৯৯৫ সালে রাপা নুই ন্যাশনাল পার্কটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
৬৩ বর্গ মাইল দ্বীপটিতে মোট ৮৮৭টি পাথুরে মোয়াই রয়েছে। পাথরের মূর্তিগুলো মানুষের আদলে তৈরি করা। এগুলো দেখতে রানো রারাকু এবং আহু তোঙ্গারিকি এলাকা দুটো সেরা। বলা হয়, মোয়াইগুলো বানানোর জন্য রানো রারাকুকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, এখানে প্রচুর আগ্নেয়শিলা রয়েছে। ওগুলোকেই মোয়াইয়ে পরিণত করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় এলাকায় গেলে বিশাল সব মূর্তির দেখা মিলবে। পুরো ৪০ ফুট উঁচু মোয়াই দেখতে পাবেন সেখানে। গোটা দ্বীপ ঘুরে দেখতে এবং ইতিহাস বুঝতে একজন পেশাদার গাইডের সহায়তা নিলে ভালো হবে।
ইস্টার আইল্যান্ডের এই অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো ইতিহাস করে সংরক্ষণ করছে ফাদার সেবাস্টিয়ান এনগ্লার্ট অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল মিউজিয়াম। অন্যান্য সংস্কৃতি এবং মোয়াই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তৈজসপত্রের দেখা মিলবে জাদুঘরে।
হাইকিংয়ের বিস্তর সুযোগ রয়েছে। সবুজের কার্পেটে মোড়ানো আগ্নেয় পাহাড়ের চড়াই-উৎড়াই পেরোনো বিরল অভিজ্ঞতা দেবে। নৌকায় করে মাছও ধরতে পারবেন। নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
এই দ্বীপের খাবার-দাবারে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়েছে সামুদ্রিক খাবার। ইচ্ছে হলে নিজেও ডাইভিং করতে পারেন। টলটলে পানির নিচটা পরিষ্কার দেখতে পারবেন। স্থানীয়দের খাবারের রাজা হলো টুনা মাছ। অন্য যেকোনো খাবার টাটকা, সতেজ আর সুস্বাদু।
লাখ লাখ বছর ধরে দ্বীপটিতে আগ্নেয়গিরি সক্রিয় অবস্থান করছে। তিনটি বড় আগ্নেয়গিরি দ্বীপটিকে ত্রিভুজের চেহারা দিয়েছে। এদের আরো ছোট ছোট ৭০টির মতো জ্বালামুখ রয়েছে। অসম্ভব সুন্দর এই আগ্নেয়গিরিগুলো। কাজেই সেখানে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে এগুলো।
দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের শেষ প্রান্তে এক বিশাল গর্তে সুপেয় পানির সঞ্চয় রয়েছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণ সবজি চাষ করা হয়। নিরামিষভোজীদের কোনো চিন্তাই করতে হবে না টাটকার সবজির জন্যে। গোটা দ্বীপটাকে এক মায়াবী অনুভূতি যেন ঘিরে রেখেছে।
সূত্র : সিএনএন