
তিনি অসুস্থতার কথা বলেছেন
ঢাকা,০৩ অক্টোবর,(ডেইলি টাইমস ২৪):
প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার বিষয়টি কী?
আনিসুল হক: বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাবেন, সেটা প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে কি আমরা বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলতে পারি?
আনিসুল হক: সেটা এখনই কেমন করে বলবেন, কারণ ওনার (প্রধান বিচারপতির) ছুটি কার্যকর হবে মঙ্গলবার থেকে। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যিনি প্রবীণতম তিনিই হবেন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই হবেন প্রধান বিচারপতি।
তাঁর তরফে কি সম্মতির কোনো বিষয় থাকবে?
আনিসুল হক: না। এখানে কোনো সম্মতি দেওয়ার বিষয় নেই।
তার মানে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন?
আনিসুল হক: আপনি কীভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কথাটি বলছেন? স্বয়ংক্রিয় মানে কী?
স্বয়ংক্রিয় মনে আপনা-আপনি। যখনই প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদন কার্যকর হবে, তখন থেকেই আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্যতম বিচারক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন। কোনো ঘোষণার প্রয়োজন হবে না।
আনিসুল হক: আপনা-আপনি তো হবেন না। ঘোষণা তো একটা দিতেই হবে। এর একটা গেজেট হতে হবে না?
আমরা জানতে চাইছিলাম, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলেই হলো। তারপরে যিনিই জ্যেষ্ঠতম হিসেবে থাকবেন, তিনিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন। তাঁর পক্ষেÿএই পদ গ্রহণ করা বা না করার কোনো বিষয় নেই?
আনিসুল হক: ঠিক তাই। গ্রহণ করা বা না করার তো কোনো সুযোগ নেই। এটি একটি সাংবিধানিক ব্যাপার।
প্রধান বিচারপতির ছুটির দরখাস্ত কখন আপনার হাতে পৌঁছেছে?
আনিসুল হক: আজ সকালে পেয়েছি। ঠিক সকালেও নয়—
কী কারণে তিনি ছুটি নিচ্ছেন?
আনিসুল হক: তিনি অসুস্থতার কথা বলেছেন। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়েছেন।
সময়সীমাটা কি এক মাস?
আনিসুল হক: জি, এক মাস।
আপনি কি মন্তব্য করবেন যে, যখন এটা একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে হয়েছে?
আনিসুল হক: কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপট নয়। কেন আপনি একে বিশেষ প্রেক্ষাপট বলবেন? তিনি কি অসুস্থ হতে পারেন না? আরে কী আশ্চর্য কথা। উনি নিজেই লিখে জানিয়েছেন যে তিনি অসুস্থতার জন্য (গ্রাউন্ডে) ছুটি চেয়েছেন। আমি কীভাবে এর বাইরে আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা দেব?
এটা কি একটু অস্বাভাবিক বিষয় নয় যে অ্যাটর্নি জেনারেলের তরফে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো?
আনিসুল হক: কেন বলবেন এটা অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে? কেউ হয়তো তাঁকে জিজ্ঞেস করেছেন, ততক্ষণে অ্যাটর্নি জেনারেল হয়তো জানতে পেরেছেন। কারণ আমিই তাঁকে বলেছিলাম যে এ রকম একটি চিঠি এসেছে আমার কাছে। অ্যাটর্নি জেনারেলকে এটা আমাকে প্রথম জানাতে হয়। সেটা আমি তাঁকে অবহিত করলাম। সে জন্য হয়তো তিনি বলেছেন। এর থেকে বেশি কিছু আমি জানি না। এটুকু বলতে পারি তিনি প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি।
এ বিষয়ে কি কোনো বিবৃতি ইস্যু করা হবে?
আনিসুল হক: নিশ্চয়। এটা তো সুপ্রিম কোর্ট থেকেই ইস্যু করা হবে।
রাশিয়ার প্রধান বিচারপতির আগামী ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। এটি কি এখন হচ্ছে?
আনিসুল হক: তাঁর ওই সফর বাতিল হয়েছে বলে তো জানি না।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত বছর সস্ত্রীক রাশিয়া সফর করেছিলেন। এবং তখন তিনি রুশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ভিয়াচেস্লাভ মিখাইলোভিচ লেবেদেভকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ঢাকার রুশ দূতাবাস ১২ সেপ্টেম্বর সেই সফর চূড়ান্ত করার কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এর প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তাঁকে সিলেটেও নিতে রাজি করিয়েছিলেন। আপনি কি এই সফরের বিষয়টি জানতেন?
আনিসুল হক: এ রকম একটি খবর আমি শুনেছিলাম।
এখন প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার কারণে সেই সফর কি অনিশ্চিত হতে পারে? সফরটি হবে?
আনিসুল হক: সেই সফর না হওয়ার কী কারণ ঘটল, আমি তো বুঝলাম না।
যেহেতু সেটি ছিল প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ।
আনিসুল হক: শুনুন, আপনি এটা ভালো করেই জানেন যে ব্যক্তি বড় কথা নয়, প্রতিষ্ঠান বড় কথা। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি তাঁকে দাওয়াত করেছিলেন। সেই দাওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে যদি কেউ অতিথি হিসেবে এখানে আসেন, যিনিই প্রধান বিচারপতি, অস্থায়ী বা স্থায়ী এটা তখন তাঁর কর্তব্য হয়ে যায়, তাঁর আতিথেয়তার দায়িত্ব নেওয়া, তাই নয় কি? সেই হিসেবে যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তিনিই এ বিষয়ে যথা দায়িত্ব পালন করবেন এবং সেটা করাটাই স্বাভাবিক।
আপনি জানেন সুপ্রিম কোর্টের এটাই ঐতিহ্য যে দীর্ঘ অবকাশের পরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারক ও আইনজীবীরা করমর্দন করেন। ছুটি মঙ্গলবারের কার্যদিবসের কখন থেকে কার্যকর হবে? তিনি কি ওই অনুষ্ঠান করতে পারবেন?
আনিসুল হক: না। আমি যতদূর জানি মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছুটি কার্যকর হয়ে যাবে। তার কারণ হলো তিনি তাঁর দরখাস্তটি দিয়েছেন আজকে (সোমবার)। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে তারিখে সই করেন; তাহলে যে মুহূর্তে সই করেছেন, ৩ তারিখ (মঙ্গলবার) থেকেই বা দুপুর বারোটা থেকেই তা কার্যকর হয়ে যাবে। হবে না?
সেটাই হওয়ার কথা। আপনি কি ফাইল বঙ্গভবনে নাকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন?
আনিসুল হক: এটা আমার দপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবে, সেখান থেকে যাবে বঙ্গভবনে।