
ন্যায্যমূল্য মিলছে না, পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক
ঢাকা,০৬ অক্টোবর,(ডেইলি টাইমস ২৪):
বগুড়ার সারিয়াকান্দির বিভিন্ন হাট-বাজারে পাটের ব্যাপক আমদানি হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। গত মঙ্গলবার সারিয়াকান্দি হাটে পাঁচ হাজার মণ পাট আমদানি হয় বলে বেপারিরা জানান। মানভেদে ৯শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৬শ’ টাকা মণ দরে পাট বেচাকেনা হয়েছে। তবে এতে উত্পাদনের খরচও ঘরে তুলতে পারেননি অনেক কৃষক। অন্যদিকে দিনের পর দিন পাটের দরপতনের ফলে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যতই দিন যাচ্ছে উপজেলায় কমছে পাটের চাষ। পাটের জায়গা দখল করেছে অন্যান্য লাভজনক আবাদ। মূলত পাটের দরপতন, উত্পাদন খরচ বেশি ও পাট পচানোর পানির অভাবেই কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানা গেছে।
বগুড়া জেলায় যে পাট উত্পন্ন হয় তার অর্ধেক উত্পন্ন হয় সারিয়াকান্দি উপজেলায়। কিন্তু বন্যার কারণে এবার পাটের ফলন ভালো হয়নি। আগাম বন্যা হওয়ায় পাট পুষ্ট হওয়ার আগেই কেটে নিতে বাধ্য হন কৃষকরা। ফলে পাটের ওজন বাড়েনি। বিঘায় ৫/৬ মণের বেশি ফলন পাওয়া যায়নি।
উপজেলার হাট শেরপুর ইউনিয়নের ধনার চরের সাইফুল ইসলাম এবার ১৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। সারিয়াকান্দি হাটে ৫৫ মণ পাট বিক্রি করেছেন ১৬শ’ টাকা মণ দরে। চরবাটির মোহাম্মদ আলী ৯ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। হাটে ১৪ মণ পাট বিক্রি করেছেন ১৬শ’ টাকা মণ দরে। কিন্তু এরা কেউই তেমন লাভের মুখ দেখতে পারেননি। তারা জানিয়েছেন, পাট কাটা-ধোয়ার কাজে ৫শ’ টাকা করে কামলা নিতে হয়। তাই ২ হাজার টাকার নিচে পাট বিক্রি করলে তাদের পোষায় না।
অন্যদিকে জামথল চরের মোখলেছার রহমান এবার ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় এক ছটাক পাটও ঘরে তুলতে পারেননি। টেংরাকুড়ার পাট চাষি আবেদ আলীও একই ধরনের ক্ষতির কথা জানালেন।
চলতি বছর বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। গত বছর ১৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবার উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ বেল। কিন্তু এবার চাষের জমি কম হওয়ায় এবং বন্যাজনিত কারণে পাট উত্পাদন কিছুটা কম হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কমছে পাট চাষ: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষকরা পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এবার বিভিন্ন মাঠে অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত ভাবে পাটের চাষ চোখে পড়েছে। কৃষকরা নিজের প্রয়োজনে খুবই কম পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করছেন। উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে আর পাট চাষ হচ্ছে না। ফলে এবার পাটের ভরা মৌসুমেও পাট মিলেনি উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে।
উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার গ্রামের শেখ মো. হাফিজার রহমান বলেন, কয়েক দশক আগেও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে রাণীনগর উপজেলা ছিল পাট চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু দিনের পর দিন পাটের মূল্য ব্যাপক হারে পতন হওয়ায় পাট চাষে অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই বর্তমানে নিজেদের প্রয়োজনেই শুধু অল্প করে পাট চাষ করি। বর্তমানে উত্পাদন খরচ বেশি ও বিক্রয় মূল্য কম হওয়ায় এলাকার চাষিরাও পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে তিনি জানান।
মিরাট ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দু’ বছর থেকে পাট চাষ করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পাট পচানোর পানি ও জায়গার অভাবে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। এ জন্য এবার আমরা পাট চাষ করিনি। ওই জমিগুলোতে এবার ধানসহ অন্যান্য আবাদ করে লাভবান হচ্ছি।
উপজেলার শের-এ বাংলা (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোফাখ্খার হোসেন খাঁন পথিক বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে কৃষকরা আস্তে আস্তে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পাট চাষকে আবার আগের মতো ফিরিয়ে আনতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নতুন করে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই আবাদের জন্য কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। এই রকম নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসসূত্র জানায়, এবার উপজেলার মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বিঘায় বিভিন্ন জাতের পাট চাষে মোট খরচ হয় সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে অধিক ফলনশীল তোষা জাতের পাট উত্পাদন হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ হারে। তোষা জাতের ভালো মানের পাটের প্রতি মণ বাজার মূল্য ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে বাজার মূল্য বিভিন্ন সময়ে কম বেশি হয় বলে পাট ব্যবসায়ীরা জানান।
এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম সারওয়ার জানান, প্রকৃতপক্ষে পাট মূলত পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায়। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে আমরাই কৃষকদের পাট সম্পর্কে যাবতীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। যদি সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে পাটের পণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করে তাহলে কৃষকরা পাটের প্রকৃত মূল্য পাবেন এবং পাট চাষে আগ্রহী হবেন।