
বয়সের চেয়ে বিদ্যার ভার বেশি!
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
বলা হয়ে থাকে শিশুরাই আগামী। কাজেই শিশুদের সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। যে জাতি শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে না সেই জাতি খুব বেশি দূর এগোতে পারে না। উন্নত বিশ্ব শিশুদের পরিচর্যা করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে তারাই দেশ ও জাতিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়। আমাদের দেশেও শিশুর পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।
আশার কথা হচ্ছে একটি শিক্ষিত জাতি তৈরির জন্য নানামুখী চেষ্টা চলছে। শিশুদের স্কুলগামী করার জন্য নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হচ্ছে। সেসব বইয়ের কাগজ ও ছাপার মান উন্নত হচ্ছে। রঙিন হচ্ছে বইয়ের ভেতরের ছবি। এর সবই হচ্ছে শিশুরা যাতে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় সেজন্য। কিন্তু কোথায় যেন একটি গলদ রয়ে গেছে। শিশুদের শিার নামে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এ কারণে পাঠ্য বইয়ের বাইরেও নানা ধরনের সহায়ক গ্রন্থ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এটা যতোটা না শিশুদের শিক্ষার জন্য তার চেয়ে বাণিজ্যমুখী প্রবণতাই কাজ করে বেশি। এ জন্য বয়সের তুলনায় বইয়ের বেশি ওজন বহন করতে হচ্ছে শিশুদের। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক নানামুখি সমস্যা হচ্ছে।
‘ভারি ব্যাগ বহনের কারণে যাতে পিঠে ব্যথা বা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মত সমস্যা দেখা না দেয় সেজন্য অনুমোদিত বই, উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাগে করে বিদ্যালয়ের বয়ে আনা নিরুৎসাহিত করতে হবে।’
এর প্রেক্ষিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগে অনুমোদিত বই, উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনা নিরুৎসাহিত করেছে শিক্ষা অধিদফতর। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য যে সব বই অনুমোদন করেছে তা পরিবহনে কোন ছেলে-মেয়েদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যে সব ছাত্র-ছাত্রী ব্যাগে বই বহন করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এর ওজন যাতে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘ভারি ব্যাগ বহনের কারণে যাতে পিঠে ব্যথা বা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মত সমস্যা দেখা না দেয় সেজন্য অনুমোদিত বই, উপকরণ ছাড়া অন্য কিছু ব্যাগে করে বিদ্যালয়ের বয়ে আনা নিরুৎসাহিত করতে হবে।’ ‘এমতাবস্থায় প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক, বিদ্যালয়ের এসএমসি (বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ) ও অভিভাবকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন’ বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই নির্দেশনা অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। যে শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ, পড়াশোনার নাম করে তাদের যদি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলা দেয়া হয় সেটা হবে অত্যন্তদুঃখজনক। অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। শিশুর কাঁধ থেকে বিদ্যার ভারি বোঝা নামিয়ে ফেলতে হবে। আনন্দময় শৈশব উপভোগ করে প্রতিটি শিশু যেন বেড়ে উঠতে পারে নিশ্চিত করতে হবে সেটিও।