অর্থ ও বাণিজ্য

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর এমন দুর্দশা কেন?

ঢাকা, ১১ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলো ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনতে গুনতে এখন এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এ চিনিকলগুলোর লোকসান এখন ৩০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

কলগুলো এতই লোকসানে পড়েছে যে, এখন তারা তাদের দৈনন্দিন খরচও মেটাতে পারছে না এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে শ্রমিকদের বেতনভাতাও ঠিকমতো দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ১৫টি চিনিকলের মধ্যে শুধু কেরু এন্ড কোম্পানি ছাড়া বাকি ১৪টিই আছে লোকসানের খাতায়।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন সরকারি চিনি কলগুলো ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১৪০০.০৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫০০.৬৪ কোটি ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫০০.২২ কোটি টাকা লোকসান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব এ চিনিকলগুলো। পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা সত্বেও শুধু কাঁচামালের অভাবে সরকারি চিনিকলগুলো আশানুরুপ চিনি উৎপাদন করতে পারছে না। এমনকি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব চিনি কলগুলোর উৎপাদনমূল্য এর বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি। ফলে চিনিকলগুলো দিনদিন আরও লোকসানের জালে আটকা পড়ছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ প্রিয়.কমকে বলেন, সরকারী চিনি কলগুলোর উৎপাদনক্ষমতা আড়াই লাখ মেট্রিক টন। যোগান ঠিক থাকলে এর চেয়েও বেশি উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু চিনি কলগুলোর এ দুরবস্থার পেছনে প্রধান কারণ কাঁচামাল অর্থাৎ আখের অসহজলভ্যতা। চাষীরা আখ চাষ এখন আগের চেয়ে অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছে। আখ চাষে যেহেতু অনেক সময় লাগে, তাই চাষীরা অল্প সময়ে উৎপাদন করা সম্ভব এমন ফসলের দিকে ঝুঁকছে। বড় বড় আঁখ চাষীদের জন্য এটি এখনো লাভজনক পর্যায়ে আছে বলে তারা এখনো এ চাষটিকে ধরে রেখেছে। কিন্তু ছোট চাষীদের জন্য এটি তেমন লাভজনক নয়।

তবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: হারেস আলী কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করতে নতুন পরিকল্পনার কথা জানালেন। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, কৃষকদেরকে আখ চাষে উৎসাহী করে তুলতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। চাষীরা যাতে আখের সাথে অন্যান্য সাথী ফসল চাষ করে আরও লাভবান হতে পারেন, এজন্য উন্নতি প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা নিচ্ছে কর্পোরেশন।  একই সাথে চিনিকলগুলো যাতে সারাবছর উৎপাদনে থাকতে পারে সেজন্য আখের মৌসুম শেষে বিদেশ থেকে কাঁচা চিনি আমদানি করে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে যাতে সারাবছরই কলগুলো সচল রাখা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা হচ্ছে।

প্রতিবছর দেশে ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে যার অধিকাংশই আমদানি করা হয়। কর্পোরেশনের তথ্য অনুসারে প্রতি মাসে চিনির চাহিদা থাকে ১.১ লাখ টন।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের অধীনে থাকা ১৫টি চিনিকলের বাছরে আড়াই লাখ টন চিনি উৎপাদনে সক্ষম। অথচ গত বছর কলগুলো মাত্র ৬০ হাজার টন চিনি উৎপাদন করেছে।

প্রতিবছর ১৪-১৫ লাখ টন অপিরোশিধিত চিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যেগুলো পরে পরিশোধনের পর বাজারে বিক্রি করা হয়। এছাড়া সরকার কোনো দুর্যোগকালীন মুহূর্তের জন্য কিছু চিনি সবসময় আলাদা মজুদ করে রাখে।

চিনির বর্তমান বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ১ লাখ টন চিনি নতুন করে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button