অর্থ ও বাণিজ্য

বিশ্বব্যাংকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ চাইবে বাংলাদেশ

ঢাকা, ১২ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

বিশ্বব্যাংকের কাছে ৪০ হাজার কোটি টাকা (৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। চলতি বছর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন বছরের জন্য এ সহায়তা চাওয়া হবে। আগামী ১৩-১৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন। সেখানেই বিভিন্ন পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় এ প্রস্তাব দেবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত জুনে শেষ হয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ-১৭) থেকে সহজ শর্তে ঋণের প্রতিশ্রুতি ছিল ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) ৩২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই থেকে শুরু হওয়ায় আইডিএ-১৮তে বেশি ঋণ সহায়তা চায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি চাওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ব্যাংকের কান্ট্রি অফিস (ঢাকা অফিস) অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, আইডিএ-১৮তে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিতে পারবে না সংস্থাটি। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক বলেছে, এর বাইরে অতিরিক্ত অর্থায়ন নিতে চাইলে স্কেল আপ ফ্যাসিলিটিসহ (চড়া সুদের ঋণ) অন্যান্য ফান্ড তো রয়েছেই। কিন্তু তারপরও সহায়তা বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন করার দাবি জানানো হবে ওয়াশিংটনে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে বলা হবে, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে দেশ। এজন্য ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাছাড়া আইডিএ তহবিলের অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সেই সঙ্গে আগামীতে পরিবহন খাতে ব্যাপক বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। এজন্য নিয়িমিত খাতের সঙ্গে ট্রান্সপোর্টেশন (পরিবহন) খাত যুক্ত করা হচ্ছে আগামী উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে। এসব দিক বিবেচনা করেই অতিরিক্ত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংক সব সময়ই স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, বিদ্যুৎ, আর্থিক খাতে সংস্কার ও স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক খাতে নিয়মিত অর্থায়ন করলেও গত অর্থবছরেই কেবল রিজিওনাল ওয়াটার ওয়ে শীর্ষক একটি প্রকল্পে অর্থায়ন করে সংস্থাটি। কিন্তু চলতি অর্থবছর থেকে আরও বেশি প্রকল্পে অর্থায়ন চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-২ (বিআরটি-২) শীর্ষক একটি প্রকল্পের জন্য বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা প্রয়োজন হবে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় আঞ্চলিক সংঘাত ও শরণার্থী সংকটসহ ৯ ইস্যু তুলে ধরবে বাংলাদেশ। অন্য ইস্যুগুলো হচ্ছে- বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অবস্থা, কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামো এবং নিন্ম আয়ের দেশগুলোর বিষয়াদি। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ও ঋণ ভবিষ্যতে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভার মূল বিষয় হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভা এবং আইএমএফের ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল কমিটির বৈঠক। এ বৈঠকগুলোয় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কার্যক্রমের অগ্রগতি ও অন্যান্য নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া সম্মেলনের বিভিন্ন সেমিনার ও সেশনে বিশ্ব অর্থনীতি, আঞ্চলিক সংঘাত ও শরণার্থী সংকট, কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামো এবং নিন্ম আয়ের দেশগুলোর বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ও ঋণ ভবিষ্যতে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগদানের ১০ সদস্যের মূল প্রতিনিধি দলসহ ২৪ সদসস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, ইআরডির সচিব কাজী শফিকুল আযম প্রমুখ।
Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button