
বিলেতে প্রথম পাঠ : স্যারের নাম ধরেই ডাকতে হবে!
ঢাকা, ১৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
`আমার নাম টনি বার্চ….’, কথাগুলো যিনি বলছিলেন তিনি দেখতে হুবহু অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটার মার্ক ওয়াহ-এর মতো। তিনি বলছিলেন, ‘…তবে তোমরা আমাকে শুধুমাত্র টনি বলে ডাকবে।
মি. টনি বার্চ, মি. টনি, টনি স্যার, স্যার টনি কোনো কিছু বলার দরকার নাই। নাম ধরেই ডাকতে হবে। কোনো দরকার হলেই বলবে- `হাই টনি…’
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে আমি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের ওপর মাস্টার্স ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) পড়তে এসেছি বাংলাদেশ থেকে। আর এসেই টিচারের এ কথা শুনে অবাক হলাম।
বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটিতে আমার এমবিএ ক্লাস শুরুর দিন টিচার মি. টনি এভাবেই নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন। পরে দেখেছি এখানে যতো বুড়ো লোকই হোকনা কেন সবাই নাম ধরেই ডাকে।
প্রথম দিনটি ছিল খুব মজার। আমাদের ক্লাস শুরু হবার কথা ছিল সকাল ১০টায়। নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে দেখি ক্লাস আগেই শুরু হয়ে গেছে। অনুপ প্যাটেল নামে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ভদ্রলোক সভাপতির আসনে ছিলেন। এ সেমিস্টারে যে কয়জন টিচারের ক্লাস আছে সবাই ১৫ মিনিট করে পরিচিতিমূলক ক্লাস নিলেন।
মি. টনি অপারেশন ম্যানেজমেন্ট পড়াবেন। তিনি দাবী করলেন তার সাবজেক্টই পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার আগের বক্তা বা পরের বক্তাসহ অন্য কেউ যদি অন্য কিছু বলে থাকে তবে তা ভুল। তার সাবজেক্টই গুরুত্বপূর্ণ!
জানা গেল, মি. টনির একটা খামারবাড়ি আছে। সেখানেই তিনি থাকেন। তার বহু ঘোড়া আছে যেগুলোর পিঠে চড়ে তিনি প্রায়ই ঘুরে বেড়ান। তার মেয়েরাও ঘোড়ার পিঠে চড়তে খুব পছন্দ করে। তবে এখানে তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে আসেননি। ৩০-৩৫ মাইল গাড়ি চালিয়ে এসেছেন।
ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। ব্রিটিশ নেই বললেই চলে। নতুন আসার কারণে আমাদের ব্রিটিশ উচ্চারণ বুঝতে সবারই খুব কষ্ট হচ্ছিল। এ কারণে টিচার কি বলছে তা যেমন আমাদের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছিল না, তেমন শিক্ষার্থীরা কিছু বললে তাও শিক্ষক বুঝতে পারছিল না। অনেক ছাত্র-ছাত্রী একটা কথা তিনবার করে বললেও টিচার বুঝতে পারছিল না। যদিও সবাই ইংরেজিতেই বলছে। কয়েক মাস পরে ধীরে ধীরে বিষয়টি সহজ হয়ে এসেছিল।
ক্লাসমেট হিসেবে পেলাম চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরকে। আর ক্লাসে আমি সহ ছয়জন বাংলাদেশি ছাত্র পাওয়া গেল।