জেলার সংবাদ

দিবা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে’- দাবি সহপাঠীদের

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী দিল আফরোজ দিবা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছেন তার সহপাঠী এবং স্বজনরা। তাদের অভিযোগ দিবাকে তার স্বামী ফিরোজ কবির ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন করে হত্যা শেষে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সামনে আজ সোমবার দুপুরে নলাম-বাইশমাইল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দিবা হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিক  মানববন্ধন কর্মসূচিতে দিবার সহপাঠী, স্বজন এবং গণ বিশ্ববদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। মানববন্ধনে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।

পরিবার সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে দিবার ছোট বোন সাবিবা তাবাচ্ছুম জুঁই জানান, তিন বোনের মধ্যে সবার বড় দিবা তার পূর্ব পরিচিত ফিরোজ কবিরকে দুই পরিবারের অসম্মতিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে গত বছরের ৫ মে বিয়ে করেন। এরপর দিবাকে নিজেদের বাড়িতে না নিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে ফিরোজ কবির মাসিক এক হাজার টাকা ভাড়ায় পৌর এলাকার বাড্ডা-ভাটপাড়া মহল্লার রাজা মিয়ার দোতলা বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই ফিরোজ দিবার ওপর অত্যাচার করতেন তার স্বামী। বিয়ের কাবিননামায় প্রথমে কাবিন হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে এক লাখ টাকা করতে চাওয়ায় দিবা তাতে অস্বীকৃতি জানান। এতে দিবার প্রতি অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। দিবার মরদেহে মারধরের চিহ্ন ছিল এবং ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে, দিবার বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়েছিল। এতে তার পাজরের হাড় ভেঙে গেছে।

দিবার সহপাঠীরা জানান, দিবা একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। কিন্তু তাকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে পড়াশুনা করতে বাধা দেওয়া হতো। এমনকি মারধরও করা হতো। তার তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করতে দেওয়া হয়নি। তারা দিবা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান। বিচার না পেলে তারা অধিকতর কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তারা আরও জানান, দিবার বাবা দেলোয়ার হোসেনসহ তারা কয়েকজন সোমবার সাভার মডেল থানার ওসির সঙ্গে দেখা করলেও নানা অজুহাতে তিনি হত্যা মামলা নিতে সম্মত হননি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী বাবু বলেন, “আমাদের কাছে প্রতিটি শিক্ষার্থীই মূল্যবান। দিবা পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বেশ পারদর্শী ছিল। তাকে হারানো আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য খুবই কষ্টের। আমরা গণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় মর্মাহত এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। ”

এদিকে, ফিরোজ কবির ও দিবা যে বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করতেন সেই বাড়িওয়ালা রাজা মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, প্রায়ই এই দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হতো। শনিবার দুপুরের দিকে ফিরোজের চিৎকার শুনে তারা ফিরোজের কক্ষে গিয়ে তাকে তার স্ত্রী দিবাকে পানি পান করানোর চেষ্টা করতে দেখতে পান। তখন ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে একটি ওড়না ঝুলছিল। পরে ফিরোজ দিবাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক দিবাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর দিবাকে মৃত অবস্থায় নিয়ে ফিরে আসেন ফিরোজ।

সাভার মডেল থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, “ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরের দিকে ফিরোজের বাবা ফোন করে দিবার বাবা দেলোয়ার হোসেনকে জানান, দিবা আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে দিবার বাবাসহ স্বজনরা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে  ফিরোজের বাবার বাড়িতে গিয়ে দিবার মরদেহটি পান তারা। দিবার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল বলে উল্লেখ করেন দিবার বাবা।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button