আলোচিত সংবাদ

তিন হাসপাতাল ঘুরে খোলা স্থানে সন্তান প্রসব নিয়ে তোলপাড়

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আজিমপুর ম্যাটারনিটি নামেই পরিচিত। ম্যাটারনিটির সামনে খোলা জায়গায় মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সন্তান প্রসব করেন পারভীন আক্তার (২৬)। অভিযোগ উঠেছে, টাকা না দেয়ায় তিন হাসপাতাল ঘুরে কোথাও ঠাঁই হয়নি ওই নারীর।

এ নিয়ে দু’দিন ধরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় আজিমপুর ম্যাটারনিটির আয়া শাহিদাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এটি দালালদের ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে ভেতরের কিছু কর্মচারীও জড়িত রয়েছে। নতুবা ভেতর থেকে ওই রোগী কিভাবে বাইরে যান তা নিয়ে তারা নিজেরাই প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে রোগীর স্বজনের অভিযোগ, টাকা দিতে না পারায় শুধু আজিমপুর ম্যাটারনিটি নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফেরত আসতে হয়েছে পারভীন আক্তারকে।

অন্তঃসত্ত্বা পারভীন আক্তার গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশেই থাকতেন। স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই। অযতœ-অবহেলায় পারভীন আক্তারের গর্ভের সন্তানের নানা ত্রুটি দেখা দেয়। সোমবার রাতে তার প্রসব বেদনা ওঠে। সোহেল নামে পরিচিত একজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢামেক হাসপাতালের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের গাইনি বিভাগে। গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন তার গর্ভের সন্তানের অবস্থা ভালো নয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তির জন্য জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারকে লেখেন। সোহেল জানান, এরই মধ্যে একজন জানান, রোগীর সিজার করতে হবে। বেশ কিছু টাকা খরচপাতি লাগবে। কিন্তু হাতে টাকা নেই শোনার পর তিনি পারভীন আক্তারকে নিয়ে দ্রুত অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে তাকে নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে তার কাছে ১৫শ’ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেয়ায় সেখান থেকে পারভীন আক্তারকে অন্য কোথাও যেতে বলা হয়।

সোহেল নিরুপায় হয়ে পারভীন আক্তারকে নিয়ে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যান। সকাল ৮টার দিকে পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেয়া হয়। সেখানে তার নামে কোনো কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। বারবার অনুরোধের পর তাকে দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান এক নারী চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হয়ে যেতেই আয়া শাহিদা সেখানে যান। এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলেই শাহিদা তাকে টেনে দোতলা থেকে নিচে নামান। পারভীন তখন ব্যথায় ছটফট করছিলেন। অন্য একটি হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে আয়া তাকে বের করে দেন।

ম্যাটারনিটি হাসপাতাল থেকে বের হতেই প্রসব বেদনায় রাস্তার ওপর বসে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতক নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও দেখা দেয় উত্তেজনা। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পথচারী ও এলাকাবাসী। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পেশ করেছে। এ ঘটনায় আয়া শাহিদার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাকে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। এছাড়া লেবার রুমের ইনচার্জ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির একটি সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা প্রহরী যুগান্তরকে বলেন, ওই মহিলা যখন ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন তখন আমি জরুরি বিভাগে গিয়ে জানিয়েছি। সেখান থেকে তারা পৌঁছানোর আগেই ওই মহিলার সন্তান প্রসব হয়ে গেছে।

ওই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন নিরাপত্তা কর্মী যুগান্তরকে বলেন, ওই মহিলার সন্তান প্রসবের সময় দালাল জামাল, আলম, জাহিদ, ইয়ার আলী, দেলোয়ারসহ আরও কয়েকজন ছিল। তারা নিজেরা ভিডিও করেছে। উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আমার কাছে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. রওশন হোসেন জাহান যুগান্তরকে বলেন, তদন্তে বেশ কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। যা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

আজিমপুর ম্যাটারনিটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহান বলেন, ওই রোগী আসার পর তাকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে লেবার রুমে শোয়ানো হয়। এরপর তিনি বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে লেবার রুম থেকে বের হয়ে যান। পরে এ ঘটনা ঘটে। যা সত্যিই দুঃখজনক। হাসপাতাল রেখে খোলা জায়গায় সন্তান প্রসবের বিষয়টি আমাকেও ভাবিয়ে তুলছে।

তিনি আরও বলেন, দালালদের দৌরাত্ম্য কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ কারণে চক্রের কেউ ক্ষেপে গিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ভর্তি না করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। ঢামেক হাসপাতালের কোনো কর্মচারীর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button