
স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে অবশেষে আশ্রয় পেল সেই বৃদ্ধা
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
মরতেই ঝাঁপ দিয়েছিল আয়শা আক্তার (৮৫)। মাত্র ২-৩ দিনের শিশুকে স্টেশন থেকে কুড়িয়ে এনে হেলেনা আক্তার নাম দেয়। সেই নবজাতক আজ প্রতিষ্ঠিত! অথচ সেই মেয়েই তার পালিত মাকে বুধবার রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়।
জীবনে অর্জিত সবকিছু দিয়ে হেলেনাকে মানুষ করেছেন আয়শা আক্তার (৮৫)। আজ জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তার দেয়া যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকেই আপন করতে চেয়েছিলেন অচল-অক্ষম আয়শা আক্তার।
রিকশাপট্টির গৃহিণী নাজমা আক্তার বুধবার সন্ধ্যায় একটি পুকুর থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। কোনো আত্মীয়স্বজনও তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। উপয়ান্তর না পেয়ে রাতটুকু গৌরীপুর হাসপাতালে রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভয়ে চলে এসে বঙ্গবন্ধু চত্বরের রাস্তায় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। পরিচিত কাউকে পেলেই শুরু করেন গগণবিদারক চিৎকার- কেউ সাড়া দেয়নি।
অবশেষে স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে উদ্ধারকারী নাজমা আক্তারের গৃহে বৃদ্ধ মাকে রাখার জন্য আলোচনা করা হয়। নাজমা আক্তারও দরিদ্র-সন্তানদের নিয়ে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন। স্বজনদের অনুরোধে তিনি এই বৃদ্ধ মার দায়িত্ব নিতে রাজি হন।
নাজমা আক্তার জানান, তার ঘরেও ঠাঁই নেই তবে জায়গা আছে। এদিক-সেদিক নেয়ার জন্য হুইল চেয়ার খুব প্রয়োজন।
এ সময় স্বজন মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. একেএম মাহফুজুল হক তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন।
যুগান্তর প্রতিনিধি মো. রইছ উদ্দিন, উপজেলা স্বজনের সাংগঠনিক সম্পাদক সামছুজ্জামান আরিফ, ক্রীড়া সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, পৌর স্বজনের সভাপতি শ্যামল ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন শরিফের নেতৃত্বে স্বজনরা কাপড়, মশারি, তোশকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেন।
‘মরতেই ঝাঁপ দিয়েছি’ শিরোনামে বুধবার অনলাইনে খবর প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছিল নিন্দার ঝড়।
খবর পেয়ে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার ও সমাজসেবা অফিসার ইসতিয়াক আহাম্মেদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার বলেন, হৃদয়বিদারক ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমাজসেবা অফিস থেকে তার প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হবে।
জানা গেছে, আয়শা আক্তার নিঃসন্তান হওয়ায় হেলেনা খাতুনের মতো আরও অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। যাদের কেউ আজ খবর নেয়নি।
প্রায় এক বছর ঢাকার বাসায় থাকার পর বুধবার বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় তার পালিত কন্যা হেলেনা খাতুন। তার স্বামী নেই- নেই বাড়িঘর বা ঠিকানা। আছে শুধুমাত্র একটি ‘বয়স্কভাতা’র বহি।
এ নারী কলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিছুদিন ভিক্ষাও করেছেন বলে জানান রিকশাপট্টির ছুলেমা খাতুন। তবে তিনি ছিলেন পরোপকারী। আশপাশের সবার বিপদে-আপদের সঙ্গী।