জেলার সংবাদ

দিনাজপুরের ৬টি আসনের নির্বাচনী হালচাল

ঢাকা , ১৩ ডিসেম্বর , (ডেইলি টাইমস২৪):

ভারত সীমান্তবেষ্টিত দিনাজপুর জেলা ৬টি নির্বাচনী আসন নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৩টি উপজেলা নিয়ে এই ছয়টি আসনে বেশীরভাগই ছিলো আওয়ামী লীগের দখলে। দিনাজপুরের ৬টি নির্বাচনী আসনে বৈধ ৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়েছে। বর্তমানে এসব আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন এবং এই হেভিওয়েট প্রার্থীরা সকলেই আওয়ামী লীগের। এই হেভিওয়েট প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪ আসন), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান (দিনাজপুর-৫ আসন), জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম (দিনাজপুর-৩ আসন) এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২ আসন) ।

দিনাজপুর-১: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-১ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বিএনপি’র (প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের) মোহাম্মদ হানিফ, জাতীয় পার্টির শাহীনুর ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সৈয়দ মনজুর উল করিম ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির আরিফুল ইসলাম। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের সাথে ধানের শীষের প্রার্থীর লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোন্দল রয়েছে এই আসনে। আওয়ামী লীগ যদি কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুবা আসনটি দখল করবে বিএনপি। বর্তমানে নির্বাচনী পরিস্থিতি ভালো এই আসনে।

এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৪ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯ জন। ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৩টি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার এবং জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১ বার। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রৌফ চৌধুরী, ২০০১ সালে জামায়াতের প্রার্থী আব্দুল্লাহিল কাফি এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোরঞ্জন শীল গোপাল জয়লাভ করেন।

দিনাজপুর-২: দিনাজপুরের বিরল ও বোঁচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি’র সাদিক রিয়াজ, জাতীয় পার্টির জুলফিকার হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এরশাদ হোসেন।

বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল এবং এই আসনে গত ১০ বছরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদিত করায় এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর আবারও বিজয়ের সম্ভাবনা এই আসনে। ৬টি আসনের মধ্যে এই আসনটিই সবচেয়ে আওয়ামী লীগের জন্য বর্তমানে নিরাপদ বলা যায়। নির্বাচনী পরিস্থিতি ভালো।

দিনাজপুর-২ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৬ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন। ভোট কেন্দ্র ১১৩টি। ১৯৯১ সালে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার এবং বিএনপি’র প্রার্থী জয়লাভ করে একবার। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সতীশ চন্দ্র রায় ২০০১ সালে বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জয়লাভ করেন।

দিনাজপুর-৩: দিনাজপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৩ আসন। এই আসনে এবার ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন, তারা হলেন- আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম, বিএনপি’র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খাইরুজ্জামান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সৈয়দ মাহমুদ উল করিম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বদিউজ্জামান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ’র আশরাফুল ইসলাম।

দিনাজপুরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই আসনের দিনাজপুর পৌর এলাকায় বিএনপি’র ভোট বেশি। তবে গত ১০ বছরে বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করায় এই আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির লড়াই হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচন পরিস্থিতি বর্তমান পর্যন্ত ভালো।

দিনাজপুর-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭০১ জন। ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৮টি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ ৩ বার এবং বিএনপি’র প্রার্থী জয়লাভ করেছে ২ বার। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম. আব্দুর রহিম, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি’র প্রার্থী খুরশীদ জাহান হক এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবালুর রহিম এই আসন থেকে বিজয়ী হন।

দিনাজপুর-৪: চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৪ আসনে এবার ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিএনপির আখতারুজ্জামান মিয়া, জাতীয় পার্টির মোনাজাত চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মোজাফফর হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রেয়াজুল ইসলাম ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাজেদুল আলম চৌধুরী।

এই আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে বিএনপি’র তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষ পর্যন্ত দ্বিমুখী লড়াই হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশী এই আসনে। জামায়াতের আধিক্য থাকায় গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও চলে। প্রায় অর্ধেক কেন্দ্রেই ভোট স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে আবার নির্বাচন হয় স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোতে। তাই বর্তমানে পরিস্থিতি ভালো থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কতটুকু স্বাভাবিক থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

দিনাজপুর-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ২৭৬ জন। ভোট কেন্দ্র ১২৩টি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার এবং বিএনপি একবার জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিজানুর রহমান মানু, ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিয়া এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জয়লাভ করেন।

দিনাজপুর-৫: খনি সমৃদ্ধ উপজেলা পার্বতীপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৫ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৬ জন, তারা হলেন-আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপি’র এজেডএম রেজওয়ানুল হক, জাতীয় পার্টির সোলায়মান সামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতিউর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শফিকুল ইসলাম ও পিপলস পার্টির শওকত আলী।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান টানা ৫ বার জয়লাভ করায় এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। দিনাজপুর-৫ আসনে এবার মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২২২ জন। এখানে ভোট কেন্দ্র ১৩৯টি।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে টান ৫ বার জয়লাভ করেছে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জয়লাভ করেছেন।

দিনাজপুর-৬: দিনাজপুরের ৪টি উপজেলা যথাক্রমে বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট নিয়ে দিনাজপুর-৬ আসন গঠিত। এই আসনে এবার ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন, তারা হলেন-আওয়ামী লীগের শিবলী সাদিক, বিএনপি’র আনোয়ারুল ইসলাম (জামায়াতে ইসলাম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুর আলম সিদ্দিক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহিদা খাতুন।এই আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কোন্দল। ইতিপূর্বে এই আসনে জামায়াত জয়লাভ করেছে ২ বার। এবার আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোন্দল থাকায় আবারও বিএনপি হয়ে জামায়াতের প্রার্থী এবার সুযোগ নিতে পারে। ফলে এই আসনে ধানের শীষের বিজয়ের সম্ভাবনা বেশী। নির্বাচনী পরিস্থিতি বর্তমান পর্যন্ত ভালো।

দিনাজপুর-৬ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ১৪৯ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৩৪ জন। ভোট কেন্দ্র ১৬৫টি।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ ৩ বার এবং জামায়াত প্রার্থী জয়লাভ করেছে ২ বার। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে জামায়াত প্রার্থী আজিজুর রহমান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু, ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী আজিজুর রহমান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরী এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিবলী সাদিক জয়লাভ করেন।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button